মঙ্গলে মহাসাগর ছিল!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

মঙ্গল গ্রহে সুদূর অতীতের কোনো এক সময় পানির অস্তিত্ব ছিল—এমন কথা বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। কিন্তু কতটুকু পানি? মার্কিন মহাকাশ সংস্থার (নাসা) নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ‘লাল গ্রহে’ পানির পরিমাণ ছিল বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। বস্তুত, মঙ্গলপৃষ্ঠের বড় অংশ ছিল সুবিশাল এক মহাসাগরের নিচে। ফলে গ্রহটি কোনো এককালে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী ছিল—এমন ধারণার পক্ষে সমর্থন কিছুটা বেড়েছে।
সায়েন্স সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসার গবেষকেরা শক্তিশালী একাধিক দূরবীক্ষণযন্ত্রের (টেলিস্কোপ) সাহায্যে ছয় বছর ধরে মঙ্গলের আবহমণ্ডলের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের চিহ্ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেন। তাঁরা এমন ইঙ্গিত পেয়েছেন যে প্রায় ৪২০ কোটি বছর আগে গ্রহটির উপরিতলের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ এলাকা পানির নিচে ছিল। আর ওই পানির মোট পরিমাণ ছিল পৃথিবীর সুমেরু মহাসাগরের পানির চেয়েও বেশি।
নাসার ওই বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেন, মঙ্গল গ্রহটি একসময় ৪৫০ ফুট গভীর তরল স্তরের আবরণ ছিল। ওই স্তরের বিস্তার ছিল মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে। কোনো কোনো অঞ্চলে পানির গভীরতা এক মাইলেরও বেশি ছিল। মঙ্গল গ্রহের সেই পানির বেশির ভাগই (প্রায় ৮৭ শতাংশ) মহাশূন্যে হারিয়ে গেছে।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানী এবং ওই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক জেরোনিমো ভিলানুয়েভা বলেন, মঙ্গলে এককালে কী পরিমাণ পানি ছিল—সে সম্পর্কে তাঁরা একটি গ্রহণযোগ্য আনুমানিক হিসাব পেয়েছেন। এ গবেষণার সাহায্যে তাঁরা গ্রহটিতে পানির অস্তিত্বের ইতিহাস সম্পর্কে আগের চেয়ে ভালো ধারণা করতে পারবেন।
নাসার আরেক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মাইকেল মামা বলেন, বিপুল পরিমাণ পানি হারানোর পরও মঙ্গল গ্রহের উপরিতল তাঁদের আগের ধারণার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আর্দ্র ছিল। ফলে সেখানে তখন প্রাণের অস্তিত্ব থাকার উপযোগী পরিবেশও হয়তো বিদ্যমান ছিল।
নাসার ওই গবেষকেরা বলেছেন, মঙ্গলে আদি যুগে পানির পরিমাণ সম্পর্কে নতুন আনুমানিক হিসাব পাওয়ার পাশাপাশি তাঁরা দুই ধরনের পানির উপস্থিতির রাসায়নিক চিহ্ন পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মানমন্দির কেক অবজারভেটরির দূরবীক্ষণযন্ত্র (টেলিস্কোপ) এবং চিলিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইএসও) টেলিস্কোপে বিশদ পর্যবেক্ষণে মঙ্গলের এসব বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, মঙ্গলের আবহমণ্ডলে দুই রকমের পানির অস্তিত্ব ছিল। একটি প্রচলিত সাধারণ পানির মতোই, যা হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। অপরটির নাম এইচডিও, যাতে একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর জায়গা নেয় ডিউটেরিয়াম। সেই পানি তুলনামূলক ভারী। নাসা জানায়, গবেষকেরা মঙ্গলের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি কয়েকটি অঞ্চল নিয়ে বিশেষ আগ্রহী। কারণ, সেখানকার বরফাচ্ছাদিত এলাকাই গ্রহটির সবচেয়ে বড় পানির ভান্ডার বলে ধারণা করা হয়।
মঙ্গল গ্রহের উত্তর অংশে একটি মহাসাগরের অস্তিত্ব ছিল—এমন ধারণার পক্ষে-বিপক্ষে গত কয়েক দশক ধরেই বিতর্ক চলছে। গ্রহটির প্রায় সব অংশ সম্পর্কে এই প্রথম বিপুল পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের ভিত্তিতে মার্কিন ওই বিজ্ঞানীরা সুদূর অতীতে সেখানে পানির অস্তিত্ব নিয়ে একটি জোরালো অনুমান প্রতিষ্ঠা করলেন। অবশ্য এ ব্যাপারে নাসার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভিন্নমতও রয়েছে। কিউরিওসিটি রোভার প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী অশ্বিন ভাসাবাদা মনে করেন, মঙ্গলে পানির উপস্থিতির ইতিহাসের বিষয়টি নিয়ে এখনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সুপ্রাচীন যে মহাসাগরটির কথা বলা হচ্ছে, তা ‘অনুকল্প’ হিসেবেই সীমিত রয়ে গেছে।
মঙ্গলের আবহমণ্ডল সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই জানার বাকি রয়ে গেছে। নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ) বিজ্ঞানীরা আগামী বছরগুলোতে আরও অনুসন্ধানী রোবটযান মঙ্গলে পাঠাতে যাচ্ছেন। এগুলো নতুন নতুন যন্ত্র নিয়ে যাবে এবং ‘লাল গ্রহ’ নিয়ে নিবিড় গবেষণা চালাবে।
সূত্র: এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও হাফিংটন পোস্ট...

Comments

Popular posts from this blog

Chuye Dile Mon (2014) Full Album